নিজের আবেগ-অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা, টাকাপয়সা হিসাব করে খরচ করতে না পারা, চাপ সামলে চলতে না পারা, সমালোচনা নিতে না পারা।
এককথায় বয়সের সঙ্গে পরিণত আচরণ না করার এসব লক্ষণ মানে তিনি—ম্যান-চাইল্ড। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হলেও আচরণ শিশুদের মতো।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের সমাজে বসবাসকারী পুরুষদের মধ্যে অনেকেই ‘ম্যান-চাইল্ড’।
বাবা-মায়ের সম্পর্কের টানাপোড়েন, বিচ্ছেদ, অস্বাভাবিক ছেলেবেলা, কোনো ঘটনার ট্রমা, অতিরিক্ত আহ্লাদে বড় হওয়া, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা না নেওয়া—এ রকম নানা কারনে এরকম হতে পারে।
আমাদের দেশের পুরুষদের অপরিণত আচরণের অন্যতম কারণ হলো বেড়ে ওঠার সময়ে ছেলেশিশু হিসেবে অধিক সুবিধা পাওয়া,
ছেলে–মেয়ের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়া, মায়ের অনিরাপত্তাবোধ থেকে ছেলেকে একপক্ষীয় অনৈতিক সমর্থন ইত্যাদি।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষের মানসিক পরিপক্বতার বিকাশ যেভাবে হওয়ার কথা, সেটা বাধাগ্রস্ত হয়। কীভাবে জানেন?
এক গবাষনায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকভাবে শত শত বছর ধরে ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।
ছেলেশিশুরা খাবার, খেলাধুলা, আচরণ সবখানেই বেশি সুবিধা পেয়েছে। শাসন করা হয়নি। ফলে তাদের ভেতরে সবকিছুই ফর গ্রান্টেড হিসেবে নেওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
এ কারণে নিজেদের সমালোচনা তারা নিতে পারে না। যা মন চায়, তাই করাকে যুক্তিযুক্ত মনে করে।
অন্যদিকে কন্যাশিশুদের ভেতর বিরূপ পরিস্থিতিতে টিকে থাকার একটা মানসিকতা তৈরি হয়। ফলে সব পরিবেশেই তারা সহজে মানিয়ে নিতে পারে।
এমনকি দুর্যোগেও তাদের টিকে থাকার প্রবণতা বেশি।
ম্যানচাইল্ড নিয়ে তো অনেক কথাই হলো, কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনার সঙ্গী একজন ম্যানচাইল্ড কি না? কয়েকটি কারন আপনাকে জানিয়ে দেই, মিলিয়ে নিন…
১. বেশির ভাগ সময়ে বয়সের তুলনায় অপরিণত আচরণ করছে।
২. ‘চাপ’ সামলাতে পারে না।
৩. দায়িত্ব নিতে পারে না। নিজের দোষ অন্যের কাঁধে চাপাতে ওস্তাদ।
৪. নিজের আবেগ ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না।
৫. সমালোচনা নিতে পারে না।
৬. হুট করে রেগে যায়। মাঝেমধ্যে রাগের সঠিক কারণও বোঝা যায় না। রাগের মাথায় ভাঙচুরও করতে পারে।
৭. পরিস্থিতি বুঝে মানিয়ে চলতে পারে না। পরিবার, শিশু, স্বাস্থ্য যেকোনো বিষয়েই কম সচেতন।
৮. নেশায় আসক্ত হতে পারে।
৯. পেশাগত জীবন নিয়ে বিশেষ ভাবনা নেই। কোনো কারণ ছাড়াই বারবার চাকরি বদলায়।
১০. ঘরের কাজ যেমন রান্নাবান্না, বাগান করা, কাপড় পরিষ্কার করা, ইস্তিরি করা, গুছিয়ে রাখা—এসবের কিছুই সে করে না। নিজের কোনো জিনিস ঠিকমতো গুছিয়ে রাখে না।
১১. সারা দিন ভিডিও গেম খেলেও কাটাতে পারে।
১২. ধার করে, শখের বশে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনে।
১২. তার বন্ধুরাও অনেকটা তার মতো!
এসব ভেবে সঙ্গীর সাথে ঝামেলায় জড়ানো যাবে না। এই সমস্যা কিভাবে শোধরানো যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে।